Ways To Escape Satan's Deception
Trang 1 trong tổng số 1 trang
Ways To Escape Satan's Deception
Ways To Escape Satan's Deception
শয়তান থেকে বাচার দোয়া, শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া, শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই, শয়তান কিভাবে মানুষকে ধোঁকা দেয়, শয়তানকে শত্রুরূপে গ্রহণ করুন।
প্রত্যেক ঈমানদারের কতব্য হচ্ছে, আলেম-ওলামা এবং নেককার লোকদের সাথে সম্পর্ক রাখা, তাদের আন্তরিকভাবে ভালবাসা এবং সর্বদা তাদের সাহচর্যে উঠাবসা করা। তাদের নিকট থেকে দ্বীনী ইলম অর্জন করা, তাদের উপদেশ ও পরামর্শ অনুসারে জীবনযাপন করা। মন্দ ও অসৎ কর্ম থেকে সর্বদা বিরত থাকা এবং শয়তানকে শত্রু ভাবা । যেমন আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেছেন—
إن الشيطن لكم عدو فاتخذوه عدوا .
—'নিঃসন্দেহে শয়তান তোমাদের শত্রু; সুতরাং তোমরা তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ কর।' –সূরা ফাতের ঃ ৬
অর্থাৎ., আল্লাহ্ তা'আলার ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে শয়তানের বিরুদ্ধে শত্রুতা ঘোষণা কর এবং শয়তানের অবাধ্যতা এবং নাফরমানী করে তাকে অবদমিত পরাজিত কর । প্রতিটি কর্মে ও প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে শয়তানের মোকাবেলা করতে থাক। সব ধরনের ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাসে শয়তানের ধোকা প্রতারণা থেকে সাবধান থাক। যে কোন কাজ করতে গিয়ে সচেতন থেকো যেন তাতে শয়তানী প্রতারণার কোন দিক এসে না যায়। কেননা, শয়তান কখনও ইবাদতে রিয়া সৃষ্টি করিয়ে দেয়, কখনও বা পাপ কর্মকে সুন্দর সৎকর্মের আকৃতি দিয়ে পেশ করে। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ সাহায্য ও আশ্রয় প্রার্থনা কর।
রাসূলে করীম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, (ছঃ) মাটির উপর একটি রেখা টেনে বললেন, “এটা হচ্ছে আল্লাহর পথ।' অতঃপর ডানে-বামে আরও অনেকগুলো রেখা একে বললেন, এ পথগুলোর প্রত্যেকটির উপর শয়তান বসে আছে এবং লোকজনকে ডাকছে। তারপর তিনি নিজের আয়াত পাঠ করেন— إن هذا صراطی مستقیما فاتبعوه ولا تتبعوا السبل فتفرق
يكم عن سبيله.
নিঃসন্দেহে এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এ পথে চল এবং অন্য পথে চলো না। অন্যথা সেসব পথ তোমাদের তার পথ থেকে আলাদা করে দেবে।–সূরা আনআম : ১৫৩
উল্লিখিত হাদীস শরীফে রাসূলে আকরাম (ছঃ) আমাদের শয়তানের প্রতারণার বিভিন্ন পথ সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ (ছঃ) থেকে বর্ণিত, বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের একজন পাদ্রী ছিল। একদিন শয়তান তাকে প্রতারিত করার জন্য ফন্দি আঁটলো। সে এক বাড়িতে এসে একটি মেয়ের গলা টিপে ধরে। ফলে মেয়েটি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর শয়তান বাড়ীর লোকদের মনে এ ধারণা সৃষ্টি করে দিল, পাদ্রীর নিকট এ রোগীর চিকিৎসা-তদবীর আছে। সুতরাং তারা মেয়েটিকে নিয়ে পাদ্রীর নিকট এসে বলল, তাকে আপনার নিকট রাখুন। পাদ্রী তাকে নিজের হেফাযতে রাখতে অস্বীকার করে, কিন্তু মেয়েটির অভিভাবকদের পুনঃ পুনঃ অনুরোধে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল এবং তাকে তার রক্ষণাবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা করতে লাগল ।
কিছুদিন পর শয়তান পাদ্রীর মনে কুমন্ত্রণা দিতে শুরু করে। ফলে পাদ্রী মেয়েটির সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। এভাবে একদিন সে পাদ্রীর দ্বারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। অনন্তর শয়তান পাদ্রীর মনে এ মর্মে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করল, তার অভিভাবকদের নিকট তুমি কি জবাব দেবে; তারা এসে যখন দেখবে তাদের মেয়ে গর্ভবতী হয়েছে, তখন তোমাকেই দায়ী করবে। এভাবে তুমি তোমার মান-সম্মান সবই খোয়াবে । সুতরাং এ বিপদ থেকে বাঁচতে হলে মেয়েটিকে হত্যা করে মাটির নীচে পুঁতে ফেল, এতে তোমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে; অভিভাবকরা এসে যদি জিজ্ঞেস করে, তবে বলবে, সে মারা গেছে। পাদ্রী তাই ान।
এদিকে শয়তান মেয়ের অভিভাবকদের কাছে এসে তাদের মনেও এ বিষয়ে কুমন্ত্রণা সৃষ্টি করলে অভিভাবকরা এসে পাদ্রীর নিকট মেয়ের খোঁজ নিল। পাদ্রী বলল, সে মারা গেছে। তারা পাদ্রীর কথা বিশ্বাস না করে পাদ্রীকে অপরাধী
আদম সাব্যস্ত করে শূলে চড়ায়। এ সময় শয়তান তার নিকট এসে বলল, তুমি কি আমাকে চেন? আমি স্বয়ং মেয়ের গলা টিপে ধরেছিলাম, অভিভাবকদের মেয়েটিকে তোমার কাছে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলাম এবং তোমার অন্তরে কুমন্ত্রণা দিয়েছিলাম । এখন তুমি এ কঠিন বিপদ থেকে বাঁচতে চাইলে আমার কথা শোন। পাদ্রী বলল, কি কথা? শয়তান বলল, খুবই সহজ।' আমাকে দু'টি সেজদা কর তবে প্রাণে বেঁচে যাবে। পাদ্রী কোন উপায়ান্তর না দেখে শয়তানকে সেজদা করে কাফের হয়ে গেল। এভাবে শয়তান স্বীয় মনস্কামনা পূর্ণ করে পাদ্রীকে উপহাস করতে করতে পলায়ন করল। তুমি যদি এখন পবিত্র
كمثل الشيطن إذ قال للإنسان الفرط فلما كفر قال إنى কোরআনে আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন—
- তারা শয়তানের ন্যায়; সে প্রথমে মানুষকে কাফের হতে বলে, অতঃপর সে কাফের হয়ে গেলে শয়তান বলে দেয়, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।' –সূরা হাশ্র : ১৬
বর্ণিত আছে, একদিন অভিশপ্ত শয়তান হযরত ইমাম শাফেঈ (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিল, স্রষ্টা তাঁর ইচ্ছানুযায়ী আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যে কাজে ইচ্ছা সে কাজে ব্যবহার করছেন। অনন্তর তিনি ইচ্ছা করলে জান্নাত দেবেন নতুবা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। সবই দেখি তাঁর ইচ্ছা—এটা কি কোন ইনসাফের কাজ হল, না তিনি জুলুম করলেন, এ ব্যপারে আপনার অভিমত কি? ইমাম শাফেঈ (রঃ) একটু চিন্তা করে বললেন, স্রষ্টা তোকে তোর ইচ্ছামাফিক সৃষ্টি করে থাকলে অবশ্যই এটা জুলুম হবে, আর তিনি স্বীয় মর্জি অনুযায়ী করে থাকলে স্মরণ রাখ, মহান স্রষ্টা নিজের অভিপ্রায়ে সব ধরনের প্রশ্ন ও জবাবদিহিতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত পবিত্র।' এ জবাব শ্রবণ করে শয়তান বিফল-বিমুখ হয়ে পালাল এবং বলতে থাকল, ‘হে শাফেঈ! আমি এ একটিমাত্র প্রশ্নে সত্তর হাজার আবেদ ও খোদাভীরু লোককে গোমরাহ করেছি এবং আবেদের খাতা থেকে তাদের নাম কাটিয়ে দিয়েছি।'
হে পাঠক! এ কথা মনে রেখো, তোমার হৃদয় হচ্ছে দুর্গ আর শয়তান হচ্ছে তোমার দুশমন। শয়তান সব সময় এ চেষ্টায় রত থাকে, কি করে সে হৃদয়রূপ দুর্গে ঢুকে সেটা স্বীয় দখলে আনতে পারে। বস্তুতঃ দুর্গ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন হচ্ছে তার দ্বারসমূহ সংরক্ষণ করা। এজন্যে আগেই তোমাকে দুর্গের সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হতে হবে। অন্যথা শত্রুর আক্রমণ ও ক্ষতি সাধন থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। কাজেই হৃদয়রূপ দুর্গ
আদম সন্তানের চিরশত্রু শয়তানের আক্রমণ ও কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষণাবেক্ষণ করা যেমন ফরয, তেমনি রক্ষণাবেক্ষণের প্রক্রিয়া-প্রণালী সম্পর্কে জানাও অপরিহার্য কর্তব্য। কেননা, এ কথা স্বতঃসিদ্ধ, যে ইলম বা জ্ঞানের উপর কোন ফরয আমল নির্ভর করে, সেই ইলম বা জ্ঞান অর্জন করাও ফরয। অতএব শয়তানের ধোঁকা প্রতারণার চক্রজাল সম্পর্কে জানা না থাকলে যেহেতু আত্মরক্ষা করা সম্ভব নয়, সে জন্য শয়তানের ধোকা ও কুমন্ত্রণার প্রক্রিয়া-প্রণালী সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন করা বান্দার উপর ফরয বা অপরিহার্য কর্তব্য।
আদম সন্তানকে প্রতারিত করার জন্য চিরশত্রু শয়তান বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করে। কুমন্ত্রণার বিভিন্ন পথে সে মানুষের অন্তরে ঢুকে ক্ষতি সাধনে সচেষ্ট থাকে। মূলতঃ এগুলো মানুষের মাঝে অবস্থিত আভ্যন্তরীণ কুপ্রবৃত্তিসমূহেরই নামান্তর। নিম্নে সেগুলোর কয়েকটি উল্লেখ করা হল—
১. ক্রোধ ও কামাসক্তি :
ক্রোধ মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধির অবলুপ্তি ঘটায়। এ সুযোগে শয়তান মানুষের উপর আক্রমণ করার সুযোগ গ্রহণ করে। এ সময় শয়তান মানুষকে খেল-তামাশার বস্তুতে পরিণত করে এবং ফুটবলের মত ব্যবহার করে, যেমন শিশু-কিশোররা এ দিয়ে তাদের ইচ্ছামত খেলা করে থাকে। বর্ণিত আছে, একদিন এক বুযুর্গ শয়তানকে প্রশ্ন করেছিলেন, তুমি আদম সন্তানকে পরাজিত কর কিভাবে? জবাবে শয়তান বলেছিল, আমি তাদের ক্রোধ ও কামাসক্তির সময়গুলোতে আক্রমণ করে থাকি।
২. হিংসা ও লোভ-লালসা :
মানুষ জগতের প্রতিটি বস্তুর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এ দু' প্রবৃত্তির কারণে। হিংসা ও লোভ-লালসা যখন তাকে পেয়ে বসে তখন সে চোখ থাকতেও দেখে না আর কান থাকতেও শোনে না, হক ও প্রকৃত কর্তব্যের অনুভূতি সে সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলে। এ সুযোগে শয়তান তার উপর ভালভাবে সওয়ার হয়ে বসে। এভাবে ধীরে ধীরে শয়তান যখন তার মনে কামভাবের সৃষ্টি করে, তখন সে চরম ঘৃণ্য লজ্জাকর কাজে অবতীর্ণ হতেও দ্বিধা করে না।
বর্ণিত আছে, হযরত নুহ (আঃ) যখন আল্লাহ্ তা'আলার আদেশে নৌকায় আরোহণ করলেন এবং জীব-জন্তুর এক এক জোড়া সাথে নিলেন, তখন নৌকায় বৃদ্ধলোকের প্রতি তাঁর দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। হযরত নূহ (আঃ) তাকে চিনতে না পেরে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমাকে এ নৌকায় উঠার অনুমতি কে দিয়েছে?' বৃদ্ধ এক বলল, 'আমি এজন্যে উঠেছি, যাতে আপনার আহ্বানে সাড়াদানকারী ঈমানদার লোকদের মনে প্রবেশ করে তাদের কুমন্ত্রণা দান করতে পারি। ফলে তাদের অন্তর আমার সাথে থাকবে আর আপনার সাথে থাকবে কেবল তাদের।
দেহাবয়ব।' হযরত নূহ (আঃ) বললেন, 'হে অভিশপ্ত ইবলীস, আল্লাহ্র দুশমন। তুই এখান থেকে বের হয়ে যা।'
তখন শয়তান যে কথা বলেছিল তা হচ্ছে, 'হে নূহ! পাচটি বিষয়ের সাহায্যে আমি মানুষকে ধ্বংস করে থাকি ।' আল্লাহ তা'আলা হযরত নূহ (আঃ)-কে ওহী প্রেরণ করলেন, 'হে নূহ! তুমি তাকে কেবল দু'টি বিষয়ের কথা জিজ্ঞেস কর, অপর তিনটি বিষয় তোমার জানার প্রয়োজন নেই।' হযরত নূহ (আঃ) জিজ্ঞেস করলে শয়তান বলল, সে দু'টি বিষয় এমন, যা বলার পর আপনি আমার কথার বাস্তবতা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন, কিন্তু তজ্জন্য আমাকে যেন আপনি বঞ্চিত করে পেছনে ফেলে না রাখেন। বিষয় দু'টি হচ্ছে, লোভ-লালসা ও হিংসা-বিদ্বেষ। মূলতঃ হিংসার তাড়নায় আমি অভিশপ্ত হয়ে বেহেশত থেকে বহিষ্কৃত হয়েছি। লোভ-লালসা সেই ব্যাধি যা হযরত আদম (আঃ)-কে জান্নাতে নিষিদ্ধ ফল খেতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এরপর থেকে আমি আদম সন্তানদের শিকার করার জন্য লোভ-লালসার অস্ত্র কাঁধে বয়ে বেড়াতে থাকি ।
শয়তান থেকে বাচার দোয়া, শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া, শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই, শয়তান কিভাবে মানুষকে ধোঁকা দেয়, শয়তানকে শত্রুরূপে গ্রহণ করুন।
প্রত্যেক ঈমানদারের কতব্য হচ্ছে, আলেম-ওলামা এবং নেককার লোকদের সাথে সম্পর্ক রাখা, তাদের আন্তরিকভাবে ভালবাসা এবং সর্বদা তাদের সাহচর্যে উঠাবসা করা। তাদের নিকট থেকে দ্বীনী ইলম অর্জন করা, তাদের উপদেশ ও পরামর্শ অনুসারে জীবনযাপন করা। মন্দ ও অসৎ কর্ম থেকে সর্বদা বিরত থাকা এবং শয়তানকে শত্রু ভাবা । যেমন আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেছেন—
إن الشيطن لكم عدو فاتخذوه عدوا .
—'নিঃসন্দেহে শয়তান তোমাদের শত্রু; সুতরাং তোমরা তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ কর।' –সূরা ফাতের ঃ ৬
অর্থাৎ., আল্লাহ্ তা'আলার ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে শয়তানের বিরুদ্ধে শত্রুতা ঘোষণা কর এবং শয়তানের অবাধ্যতা এবং নাফরমানী করে তাকে অবদমিত পরাজিত কর । প্রতিটি কর্মে ও প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে শয়তানের মোকাবেলা করতে থাক। সব ধরনের ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাসে শয়তানের ধোকা প্রতারণা থেকে সাবধান থাক। যে কোন কাজ করতে গিয়ে সচেতন থেকো যেন তাতে শয়তানী প্রতারণার কোন দিক এসে না যায়। কেননা, শয়তান কখনও ইবাদতে রিয়া সৃষ্টি করিয়ে দেয়, কখনও বা পাপ কর্মকে সুন্দর সৎকর্মের আকৃতি দিয়ে পেশ করে। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ সাহায্য ও আশ্রয় প্রার্থনা কর।
রাসূলে করীম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, (ছঃ) মাটির উপর একটি রেখা টেনে বললেন, “এটা হচ্ছে আল্লাহর পথ।' অতঃপর ডানে-বামে আরও অনেকগুলো রেখা একে বললেন, এ পথগুলোর প্রত্যেকটির উপর শয়তান বসে আছে এবং লোকজনকে ডাকছে। তারপর তিনি নিজের আয়াত পাঠ করেন— إن هذا صراطی مستقیما فاتبعوه ولا تتبعوا السبل فتفرق
يكم عن سبيله.
নিঃসন্দেহে এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এ পথে চল এবং অন্য পথে চলো না। অন্যথা সেসব পথ তোমাদের তার পথ থেকে আলাদা করে দেবে।–সূরা আনআম : ১৫৩
উল্লিখিত হাদীস শরীফে রাসূলে আকরাম (ছঃ) আমাদের শয়তানের প্রতারণার বিভিন্ন পথ সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ (ছঃ) থেকে বর্ণিত, বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের একজন পাদ্রী ছিল। একদিন শয়তান তাকে প্রতারিত করার জন্য ফন্দি আঁটলো। সে এক বাড়িতে এসে একটি মেয়ের গলা টিপে ধরে। ফলে মেয়েটি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর শয়তান বাড়ীর লোকদের মনে এ ধারণা সৃষ্টি করে দিল, পাদ্রীর নিকট এ রোগীর চিকিৎসা-তদবীর আছে। সুতরাং তারা মেয়েটিকে নিয়ে পাদ্রীর নিকট এসে বলল, তাকে আপনার নিকট রাখুন। পাদ্রী তাকে নিজের হেফাযতে রাখতে অস্বীকার করে, কিন্তু মেয়েটির অভিভাবকদের পুনঃ পুনঃ অনুরোধে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল এবং তাকে তার রক্ষণাবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা করতে লাগল ।
কিছুদিন পর শয়তান পাদ্রীর মনে কুমন্ত্রণা দিতে শুরু করে। ফলে পাদ্রী মেয়েটির সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। এভাবে একদিন সে পাদ্রীর দ্বারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। অনন্তর শয়তান পাদ্রীর মনে এ মর্মে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করল, তার অভিভাবকদের নিকট তুমি কি জবাব দেবে; তারা এসে যখন দেখবে তাদের মেয়ে গর্ভবতী হয়েছে, তখন তোমাকেই দায়ী করবে। এভাবে তুমি তোমার মান-সম্মান সবই খোয়াবে । সুতরাং এ বিপদ থেকে বাঁচতে হলে মেয়েটিকে হত্যা করে মাটির নীচে পুঁতে ফেল, এতে তোমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে; অভিভাবকরা এসে যদি জিজ্ঞেস করে, তবে বলবে, সে মারা গেছে। পাদ্রী তাই ान।
এদিকে শয়তান মেয়ের অভিভাবকদের কাছে এসে তাদের মনেও এ বিষয়ে কুমন্ত্রণা সৃষ্টি করলে অভিভাবকরা এসে পাদ্রীর নিকট মেয়ের খোঁজ নিল। পাদ্রী বলল, সে মারা গেছে। তারা পাদ্রীর কথা বিশ্বাস না করে পাদ্রীকে অপরাধী
আদম সাব্যস্ত করে শূলে চড়ায়। এ সময় শয়তান তার নিকট এসে বলল, তুমি কি আমাকে চেন? আমি স্বয়ং মেয়ের গলা টিপে ধরেছিলাম, অভিভাবকদের মেয়েটিকে তোমার কাছে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলাম এবং তোমার অন্তরে কুমন্ত্রণা দিয়েছিলাম । এখন তুমি এ কঠিন বিপদ থেকে বাঁচতে চাইলে আমার কথা শোন। পাদ্রী বলল, কি কথা? শয়তান বলল, খুবই সহজ।' আমাকে দু'টি সেজদা কর তবে প্রাণে বেঁচে যাবে। পাদ্রী কোন উপায়ান্তর না দেখে শয়তানকে সেজদা করে কাফের হয়ে গেল। এভাবে শয়তান স্বীয় মনস্কামনা পূর্ণ করে পাদ্রীকে উপহাস করতে করতে পলায়ন করল। তুমি যদি এখন পবিত্র
كمثل الشيطن إذ قال للإنسان الفرط فلما كفر قال إنى কোরআনে আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন—
- তারা শয়তানের ন্যায়; সে প্রথমে মানুষকে কাফের হতে বলে, অতঃপর সে কাফের হয়ে গেলে শয়তান বলে দেয়, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।' –সূরা হাশ্র : ১৬
বর্ণিত আছে, একদিন অভিশপ্ত শয়তান হযরত ইমাম শাফেঈ (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিল, স্রষ্টা তাঁর ইচ্ছানুযায়ী আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যে কাজে ইচ্ছা সে কাজে ব্যবহার করছেন। অনন্তর তিনি ইচ্ছা করলে জান্নাত দেবেন নতুবা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। সবই দেখি তাঁর ইচ্ছা—এটা কি কোন ইনসাফের কাজ হল, না তিনি জুলুম করলেন, এ ব্যপারে আপনার অভিমত কি? ইমাম শাফেঈ (রঃ) একটু চিন্তা করে বললেন, স্রষ্টা তোকে তোর ইচ্ছামাফিক সৃষ্টি করে থাকলে অবশ্যই এটা জুলুম হবে, আর তিনি স্বীয় মর্জি অনুযায়ী করে থাকলে স্মরণ রাখ, মহান স্রষ্টা নিজের অভিপ্রায়ে সব ধরনের প্রশ্ন ও জবাবদিহিতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত পবিত্র।' এ জবাব শ্রবণ করে শয়তান বিফল-বিমুখ হয়ে পালাল এবং বলতে থাকল, ‘হে শাফেঈ! আমি এ একটিমাত্র প্রশ্নে সত্তর হাজার আবেদ ও খোদাভীরু লোককে গোমরাহ করেছি এবং আবেদের খাতা থেকে তাদের নাম কাটিয়ে দিয়েছি।'
হে পাঠক! এ কথা মনে রেখো, তোমার হৃদয় হচ্ছে দুর্গ আর শয়তান হচ্ছে তোমার দুশমন। শয়তান সব সময় এ চেষ্টায় রত থাকে, কি করে সে হৃদয়রূপ দুর্গে ঢুকে সেটা স্বীয় দখলে আনতে পারে। বস্তুতঃ দুর্গ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন হচ্ছে তার দ্বারসমূহ সংরক্ষণ করা। এজন্যে আগেই তোমাকে দুর্গের সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হতে হবে। অন্যথা শত্রুর আক্রমণ ও ক্ষতি সাধন থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। কাজেই হৃদয়রূপ দুর্গ
আদম সন্তানের চিরশত্রু শয়তানের আক্রমণ ও কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষণাবেক্ষণ করা যেমন ফরয, তেমনি রক্ষণাবেক্ষণের প্রক্রিয়া-প্রণালী সম্পর্কে জানাও অপরিহার্য কর্তব্য। কেননা, এ কথা স্বতঃসিদ্ধ, যে ইলম বা জ্ঞানের উপর কোন ফরয আমল নির্ভর করে, সেই ইলম বা জ্ঞান অর্জন করাও ফরয। অতএব শয়তানের ধোঁকা প্রতারণার চক্রজাল সম্পর্কে জানা না থাকলে যেহেতু আত্মরক্ষা করা সম্ভব নয়, সে জন্য শয়তানের ধোকা ও কুমন্ত্রণার প্রক্রিয়া-প্রণালী সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন করা বান্দার উপর ফরয বা অপরিহার্য কর্তব্য।
আদম সন্তানকে প্রতারিত করার জন্য চিরশত্রু শয়তান বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করে। কুমন্ত্রণার বিভিন্ন পথে সে মানুষের অন্তরে ঢুকে ক্ষতি সাধনে সচেষ্ট থাকে। মূলতঃ এগুলো মানুষের মাঝে অবস্থিত আভ্যন্তরীণ কুপ্রবৃত্তিসমূহেরই নামান্তর। নিম্নে সেগুলোর কয়েকটি উল্লেখ করা হল—
১. ক্রোধ ও কামাসক্তি :
ক্রোধ মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধির অবলুপ্তি ঘটায়। এ সুযোগে শয়তান মানুষের উপর আক্রমণ করার সুযোগ গ্রহণ করে। এ সময় শয়তান মানুষকে খেল-তামাশার বস্তুতে পরিণত করে এবং ফুটবলের মত ব্যবহার করে, যেমন শিশু-কিশোররা এ দিয়ে তাদের ইচ্ছামত খেলা করে থাকে। বর্ণিত আছে, একদিন এক বুযুর্গ শয়তানকে প্রশ্ন করেছিলেন, তুমি আদম সন্তানকে পরাজিত কর কিভাবে? জবাবে শয়তান বলেছিল, আমি তাদের ক্রোধ ও কামাসক্তির সময়গুলোতে আক্রমণ করে থাকি।
২. হিংসা ও লোভ-লালসা :
মানুষ জগতের প্রতিটি বস্তুর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এ দু' প্রবৃত্তির কারণে। হিংসা ও লোভ-লালসা যখন তাকে পেয়ে বসে তখন সে চোখ থাকতেও দেখে না আর কান থাকতেও শোনে না, হক ও প্রকৃত কর্তব্যের অনুভূতি সে সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলে। এ সুযোগে শয়তান তার উপর ভালভাবে সওয়ার হয়ে বসে। এভাবে ধীরে ধীরে শয়তান যখন তার মনে কামভাবের সৃষ্টি করে, তখন সে চরম ঘৃণ্য লজ্জাকর কাজে অবতীর্ণ হতেও দ্বিধা করে না।
বর্ণিত আছে, হযরত নুহ (আঃ) যখন আল্লাহ্ তা'আলার আদেশে নৌকায় আরোহণ করলেন এবং জীব-জন্তুর এক এক জোড়া সাথে নিলেন, তখন নৌকায় বৃদ্ধলোকের প্রতি তাঁর দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। হযরত নূহ (আঃ) তাকে চিনতে না পেরে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমাকে এ নৌকায় উঠার অনুমতি কে দিয়েছে?' বৃদ্ধ এক বলল, 'আমি এজন্যে উঠেছি, যাতে আপনার আহ্বানে সাড়াদানকারী ঈমানদার লোকদের মনে প্রবেশ করে তাদের কুমন্ত্রণা দান করতে পারি। ফলে তাদের অন্তর আমার সাথে থাকবে আর আপনার সাথে থাকবে কেবল তাদের।
দেহাবয়ব।' হযরত নূহ (আঃ) বললেন, 'হে অভিশপ্ত ইবলীস, আল্লাহ্র দুশমন। তুই এখান থেকে বের হয়ে যা।'
তখন শয়তান যে কথা বলেছিল তা হচ্ছে, 'হে নূহ! পাচটি বিষয়ের সাহায্যে আমি মানুষকে ধ্বংস করে থাকি ।' আল্লাহ তা'আলা হযরত নূহ (আঃ)-কে ওহী প্রেরণ করলেন, 'হে নূহ! তুমি তাকে কেবল দু'টি বিষয়ের কথা জিজ্ঞেস কর, অপর তিনটি বিষয় তোমার জানার প্রয়োজন নেই।' হযরত নূহ (আঃ) জিজ্ঞেস করলে শয়তান বলল, সে দু'টি বিষয় এমন, যা বলার পর আপনি আমার কথার বাস্তবতা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন, কিন্তু তজ্জন্য আমাকে যেন আপনি বঞ্চিত করে পেছনে ফেলে না রাখেন। বিষয় দু'টি হচ্ছে, লোভ-লালসা ও হিংসা-বিদ্বেষ। মূলতঃ হিংসার তাড়নায় আমি অভিশপ্ত হয়ে বেহেশত থেকে বহিষ্কৃত হয়েছি। লোভ-লালসা সেই ব্যাধি যা হযরত আদম (আঃ)-কে জান্নাতে নিষিদ্ধ ফল খেতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এরপর থেকে আমি আদম সন্তানদের শিকার করার জন্য লোভ-লালসার অস্ত্র কাঁধে বয়ে বেড়াতে থাকি ।
bryanpassman- Tổng số bài gửi : 203
Join date : 17/01/2021
apkfun.com likes this post
Similar topics
» 5 ways to reduce fever, relieve symptoms of discomfort and get well soon
» Psychiatrists suggest 12 ways to talk about "politics" in the family, not to fight.
» Psychiatrists suggest 12 ways to talk about "politics" in the family, not to fight.
» Psychiatrists suggest 12 ways to talk about "politics" in the family, not to fight.
» Psychiatrists suggest 12 ways to talk about "politics" in the family, not to fight.
» Psychiatrists suggest 12 ways to talk about "politics" in the family, not to fight.
» Psychiatrists suggest 12 ways to talk about "politics" in the family, not to fight.
Trang 1 trong tổng số 1 trang
Permissions in this forum:
Bạn không có quyền trả lời bài viết